ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় লবণমাঠে কালবৈশাখীর ক্ষতি কাটিয়ে বাম্পার ফলনের আশায় চাষীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চকরিয়া :: প্রতিবছর লবণ উৎপাদন মৌসুমের শেষদিকে অর্থাৎ এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টিপাত ও কালবৈশাখী হানা দেয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি বৃষ্টিপাত, এর পর এক ঘণ্টার কালবৈশাখীর ছোবলে লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলা। এতে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, গাছপালা ভেঙে ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ থেকে বাদ পড়েনি লবণশিল্পও। দেশের একমাত্র লবণ উৎপাদনকারী কক্সবাজারের ৬টি অঞ্চল এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে কালবৈশাখীতে লবণমাঠ বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত বছরের এই সময়ে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয় লবণ উৎপাদনে। একদিন আগেও যেখানে লবণ উৎপাদনের ধুম পড়ে যায়, পরদিন সকালেই সেই লবণ মাঠও লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এতে চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুমের শেষ সময়ে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছেন লবণ চাষিরা। তবে আবহাওয়া শুষ্ক থাকলে মাত্র কয়েকদিন পরে ফের বাম্পার লবণ উৎপাদনের আশা করছেন চাষিরা।

লবণ চাষিরা জানিয়েছেন, সরকারের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের ভুল তথ্য দিয়ে দেশের মিল মালিক সিন্ডিকেট বিদেশ থেকে লবণ আমদানির পায়তারার নানা শঙ্কা ছিল তাদের মাঝে। এর পরও সবকিছু ছাপিয়ে একটু দেরিতে হলেও লবণ উৎপাদনে মাঠে নামেন চাষিরা। শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে তীব্র তাপদাহে প্রাণিকূল অতিষ্ট হলেও লবণ চাষিরা সেই মোক্ষম আবহাওয়ার বদৌলতে বাম্পার লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়। এতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার অনেকটা কাছাকাছি লবণ উৎপাদন করেছেন বলে দাবি চাষিদের।

বাংলাদেশ লবণ চাষি সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট এএইচএম শহীদুল্লাহ চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ চকরিয়া নিউজকে বলেন, চলতি লবণ উৎপাদন মৌসুমে যতটুকু আশা করেছিলেন, এর চেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। কারণ চলতি মৌসুমে বাম্পার লবণ উৎপাদনে সহায়ক ছিল শুষ্ক আবহাওয়ার সঙ্গে তীব্র তাপদাহ। এতে সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি লবণ উৎপাদন হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।

তারা বলেন, একসপ্তাহের ব্যবধানে মাঝারি বৃষ্টিপাত, এর পর গত বুধবার সকালে এক ঘণ্টার কালবৈশাখীর ছোবলে লবণ চাষিরা কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে সেটা সঠিক। তবে আরো যে কয়দিন সামনে সময় রয়েছে তা কালবৈশাখীর ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। কেননা এবার চাষিদের উৎপাদিত লবণের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হয়েছে। তাই চাষিরা মনের আনন্দে এবার দেদার লবণ উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন। আশা করছি, সামনের যে কদিন বাকি রয়েছে, তাতে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন সক্ষম হবে।

চকরিয়ার পশ্চিম বড় ভেওলা ইউনিয়নের দরবেশকাটার লবণ চাষি হামিদ উল্লাহ চকরিয়া নিউজকে জানান, একবার মাঝারি ও ভারি বর্ষণ হলেই সনাতন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন অন্তত একসপ্তাহ বন্ধ রাখতে হয়। কারণ উৎপাদনের জন্য নতুন করে উপযোগী করে তুলতে হয় লবণ মাঠকে। তবে বর্তমানে সনাতন পদ্ধতির চেয়ে আধুনিক বা পলিথিন পদ্ধতিতে লবণ উৎপাদন একেবারে সহজলভ্য। বৃষ্টির আভাস পেলেই শুধুমাত্র মাঠে বিছিয়ে রাখা পলিথিনগুলো মুহূর্তের মধ্যে মুঁড়িয়ে রাখা সম্ভব হয়। এতে ক্ষতির চিত্রটাও কম হয়।

বিসিকের সরবরাহকৃত তথ্যানুযায়ী, এবার লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা ছিল ২৩ লাখ ৫৭ হাজার মেট্রিক টন। দেশে লবণের চাহিদাও ২৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন। ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত মৌসুমের ৪ মাসে উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৭৮০ মেট্রিক টন লবণ।

বিসিক কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক ইদ্রিচ আলী চকরিয়া নিউজকে বলেন, এবার লবণ উৎপাদন মৌসুমটি ছিল চাষিদের জন্য আশীর্বাদের। দেরিতে নেমেও চাষিরা গত ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত যেভাবে লবণ উৎপাদন করেছেন তা ছিল অবিশ্বাস্য। কারণ এবারের শুষ্ক আবহাওয়ার সাথে তীব্র তাপপ্রবাহ বাম্পার লবণ উৎপাদনে সহায়ক হয়েছে। এর মধ্যে লবণের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করাটাও ছিল বড় কাজ। সবকিছু মিলিয়ে আগামী ১৫ মে পর্যন্ত লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে উদ্বৃত্ত লবণ উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশা আমাদেরও।

পাঠকের মতামত: